মোঃ সাবিউদ্দিন: পোশাক খাতে বড় বিনিয়োগ করছে টেক্সটাইল খাতে দেশের বৃহত্তম সুতা ও কাপড় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বাদশা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কসংলগ্ন পাইওনিয়ার ডেনিম লিমিটেডের গার্মেন্টস ডিভিশন হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে প্রকল্পটি। বর্তমানে উৎপাদিত ডেনিম কাপড়ের রফতানিসহ প্রকল্প শেষে বছরে রফতানি লক্ষ্য ৭০ কোটি ডলার হতে পারে বলে প্রক্ষেপণ জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) হিসাবমতে, ২০২২ সালে দেশে সবচেয়ে বেশি সুতা রফতানি করে প্রথম অবস্থানে আছে বাদশা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের বাদশা টেক্সটাইলস লিমিটেড। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত এ প্রতিষ্ঠানই দেশের সবচেয়ে বেশি সুতা রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান। চলতি বছর তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে বাদশা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের আরেক প্রতিষ্ঠান কামাল ইয়ার্ন লিমিটেড। এছাড়া শীর্ষ দশে রয়েছে গ্রুপের কাপড় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান পাইওনিয়ার ডেনিম লিমিটেড।
২১ ডিসেম্বর সরজমিন পরিদর্শন ও বাদশা গ্রুপ-সংশ্লিষ্টদের তথ্য অনুযায়ী, হবিগঞ্জে স্থাপিত পাইওনিয়ার ডেনিম লিমিটেডের গার্মেন্টস ডিভিশন চালুর মাধ্যমে পোশাক খাতে বিনিয়োগ শুরু করে বাদশা গ্রুপ। এ প্রকল্পের কারখানা নির্মাণ চলমান রয়েছে। নির্মাণকাজ পুরোপুরি শেষে ২০২৬ সাল নাগাদ গার্মেন্টস ডিভিশনটির উৎপাদন সক্ষমতা হবে আড়াই লাখ পিস ডেনিম পোশাকের।
সূত্র জানিয়েছে, এরই মধ্যে দিনপ্রতি ৫০ হাজার পিস ডেনিম পোশাক উৎপাদন সক্ষমতা স্থাপন হয়ে গেছে। প্রথম ধাপে ৫০ হাজার পিস সক্ষমতা স্থাপনের পর দ্বিতীয় ধাপে ১ লাখ ও তৃতীয় ধাপে ১ লাখ পিস উৎপাদনে সক্ষমতা অর্জন করবে পাইওনিয়ার ডেনিম লিমিটেডের গার্মেন্টস ডিভিশনটি। মূলত ডেনিম বটম বা প্যান্ট উৎপাদন হবে। পাশাপাশি ডেনিম জ্যাকেটও উৎপাদন হতে পারে।
৩৫ লাখ বর্গফুটের পাইওনিয়ার ডেনিম লিমিটেডের গার্মেন্টস ডিভিশনটির পুরোপুরি স্থাপন শেষে ব্যয় ধরা হয়েছে আনুমানিক আড়াই হাজার কোটি টাকা। রফতানি লক্ষ্য ৫০ কোটি ডলার। বর্তমানে কাপড় উৎপাদন ও রফতানিসহ হিসাব করলে রফতানি হতে পারে ৭০ কোটি ডলারের মতো। সংশ্লিষ্টদের দাবি, একটি প্রাঙ্গণে এটাই হবে বাংলাদেশের বৃহৎ পোশাক কারখানা।
ঢাকা থেকে ১৩০ কিলোমিটার দূরে মাধবপুর থানার হবিগঞ্জ জেলায় স্থাপিত পাইওনিয়ার ডেনিমের ঠিক পাশেই গড়ে তোলা হচ্ছে ডেনিম গার্মেন্টস ডিভিশনটি। ব্র্যাক ব্যাংকের অর্থায়নে গার্মেন্টস ডিভিশনটি গড়ে তোলা হচ্ছে। এরই মধ্যে বিনিয়োগ হয়েছে ৭০০ কোটি টাকার বেশি।
জানতে চাইলে বাদশা মিয়া বলেন, ‘গার্মেন্টস ডিভিশনে এখন পর্যন্ত বিনিয়োগ ৭০০-৮০০ কোটি টাকার কম না। ২০০ বিঘার উপরে প্রকল্পটির আরঅ্যান্ডডি ভবনের ওপরতলায় পাওয়া যাবে হেলিপ্যাড, এরপরে পাওয়া যাবে ভিআইপি লাউঞ্জ ডিসপ্লে, বলা যায় শো-রুম। কারখানা ক্ষুদ্র পরিসরে চালু করে ফেলেছি। আগামী দুই বছরে পূর্ণাঙ্গরূপে চালু হবে প্রত্যাশা করছি। এ লক্ষ্য পূরণের মাধ্যমে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে কর্মসংস্থান হবে ১৫ হাজার মানুষের।
জানা গেছে, বর্তমানে বাদশা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের আওতায় কর্মসংস্থান হয়েছে ২৭ হাজার মানুষের। শিল্পসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, শূন্য থেকে বড় উত্থানে সফলতার গল্প বাদশা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. বাদশা মিয়ার। টানবাজারে সুতার গদি থেকেই ব্যবসার শুরু তার। ছিলেন স্পিনিং মিলের এজেন্ট। সাধারণত স্পিনিং মিলের সঙ্গে বার্ষিক, দ্বিবার্ষিক বা ত্রিবার্ষিক চুক্তি করতেন। চুক্তি মোতাবেক স্পিনিং মিলের উৎপাদিত সুতা দেশের বিভিন্ন প্রান্তের সুতার ব্যবসায়ীদের সরবরাহ করতেন।
মাদারীপুর জেলার শিবচরের পাঁচচর ইউনিয়নে জন্ম মো. বাদশা মিয়ার। শিবচরে বসবাস করা জনগোষ্ঠীর মধ্যে অনেকেই তাঁত ব্যবসায় জড়িত ছিলেন। সে সূত্রে ১৯৭৬ সালের দিকে জীবিকার তাগিদে নারায়ণগঞ্জে আসেন বাদশা মিয়া। ১৯৭৭ সালে সুতার পাইকারি বাণিজ্য শুরু করেন। পর্যায়ক্রমে ঐতিহ্যগত সুতার গদির মালিক হন। সুতার বাণিজ্য দিয়ে ব্যবসা শুরু করলেও শিল্প গড়ে তুলতে গিয়ে প্রথমে স্থাপন করেন রফতানিমুখী তৈরি পোশাক কারখানা।
বাদশা মিয়া ২০০০ সালে গড়ে তোলেন পাইওনিয়ার সোয়েটার লিমিটেড। এরপর ২০০৪ সালে ময়মনসিংহের ভালুকায় স্থাপন করেন বাদশা টেক্সটাইলস লিমিটেড এবং ২০১০ সালে কামাল ইয়ার্ন লিমিটেড। স্পিনিং বা সুতা উৎপাদনে বাদশা টেক্সটাইল এবং কামাল ইয়ার্নের সক্ষমতা দিনপ্রতি ৪৩০ টন। এ গ্রুপের পাইনিয়ার ডেনিম লিমিটেডে কাপড় উৎপাদন সক্ষমতা মাসে ৬৫ লাখ গজ। বর্তমানে বাদশা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের বার্ষিক টার্নওভার সাড়ে ৬২ কোটি ডলার।